লক্ষ্মীপুর রামগতিতে অভিযান সফল করতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছেন নৌ-পুলিশ সহ প্রশাসন

লক্ষ্মীপুর রামগতিতে অভিযান সফল করতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছেন নৌ-পুলিশ সহ প্রশাসন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : 

প্রতি প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মা ইলিশ রক্ষায় জাটকা অভিযান চলছে। আর অভিযান সফল করতে রামগতি বড়খেরী নৌ-পুলিশসহ প্রশাসন অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করছেন। তবুও চোর যেমন গৃহস্তকে পাহারা দেয় ঠিক তেমনি কিছু অসাধু জেলেরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে  নদীতে নৌকা নিয়ে নামে। তবে অতন্ত্র প্রহরায় থাকা প্রশাসন অভিযানকে শতভাগ সফল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ দায়িত্বের জায়গা থেকে অসাধু জেলেদেরকে ধরতে জীবন বাজি রেখে নদীতে অভিযান চালান। 

তথ্যমতে রামগতি ও কমলনগর এরিয়ায় জেলেরা নদীতে তেমন একটা নামার চেষ্টা করেননা  কারন হিসেবে কয়েকজন জেলে জানান, দুই মাসের অভিযান সফল করতে সরকার আমাদেরকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি এই দুই মাস আমরা নদীতে মাছ ধরা থেকে দুরে থাকি। এই দুই মাসের জন্য আমরা অস্থায়ীভাবে কাজ করি। তারা বলেন অন্যের দোকানে কাজ করা, মিস্ত্রি কাজ করা, মাটি কাটার কাজ করা সহ আমরা এই দুই মাস ভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। দুই মাসের অভিযান শেষে আমরা আবারও জাল এবং নৌকা নিয়ে নদীতে নামবো । তবে তাদের দাবি সরকারের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি যদি এই দুই মাস সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তারা উপকৃত হবে। অভিযানকে সফল করতে সঠিক জেলেরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করে অভিযান সফল করেন। উল্লেখ্য মার্চ এপ্রিল দুই মাস নদীতে মৎস্য আহরণ করা, যে কোন ধরনের জাল ফেলা, মাছ ধরা, মজুদ ও পরিবহন করা অবৈধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেছেন সরকার। তবে রামগতির টাংকির খাল এবং বয়ার চর এলাকার কিছু কিছু জায়গায় জেলেরা প্রকাশ্যে মাছ ধরার চেষ্টা করে যা লক্ষীপুর রামগতির এরিয়ার বাহিরে এছাড়াও ভোলার হাকিমুদ্দিনের কিল্লার খাল সহকারে কিছু এলাকায় অসাধু জেলেরা মাছ ধরার চেষ্টা করে যার চাপ নিতে হয় লক্ষ্মীপুর রামগতি বড়খেরি নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে। 

 

ইতিমধ্যে খুব অল্প সময়ে লক্ষ্মীপুর রামগতি বড়খেরী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান সফল করতে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। একরকম অসাধু জেলেদের আতঙ্ক হিসেবে নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম। কারণ তিনি সততার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনে  কাউকে এক বিন্দুও ছাড় দেননা। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, রামগতি বড়খেরী নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদান করেছি মাত্র অল্প সময় হলো । অভিযান চলাকালীন সময়ে অসাধু জেলেদের বিষয়ে আমি কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এর মধ্যে একটি মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে । তিনি বলেন নিউজে উল্লেখ আছে টাংকির ঘাট, বয়ার চর এলাকাসহ কিছু এলাকায় নদীতে নৌকা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে নামে। দুঃখজনক হলেও সত্য ওই এলাকাগুলো আমার এরিয়ার বাহিরে। এছাড়াও বোলার হাকিম উদ্দিনের কিল্লার খালসহ বেশ কিছু এলাকায় জেলেরা নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে যাহা আমার এরিয়ার বাহিরে। আমি চেষ্টা করি আমার রামগতি কমলনগর এরিয়াতে অভিযান সফল করার জন্য সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করতে। আমি দায়িত্বে কখনো অবহেলা করি না। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নামবে তাদেরকে আমি ধরে মামলা দিব।

রামগতি মাছ ঘাটের একজন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে একটি নিউজে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টির সত্যতা জানতে রামগতি মাছ ঘাটের ব্যবসায়ী ইব্রাহিমকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে একরকম অপপ্রচার চালানো হয়েছে। রামগতিতে সুন্দরভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের এই দুই মাস এখানকার কোন জেলে নদীতে নামে না। তিনি বলেন অভিযান সফল করতে যদি আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা না করি তাহলে অভিযান সফল হবে না তাই আমরা প্রশাসনকে যথেষ্ট ভাবে সহযোগিতা করি। এবং তিনি তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রামগতি কমলনগরের বেশ কয়েকজন জেলে জানান, অভিযানকে সফল করতে আমরা নৌ পুলিশসহ প্রশাসনকে সহযোগিতা করি। কারণ অভিযানের এই দুই মাস সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১৬০ কেজি করে চাল দেয়। এছাড়াও অভিযানের এই দুই মাস আমরা বিভিন্ন রকম কায়িক শ্রমের সাথে যুক্ত হই।অভিযান শেষে আবারো আমরা জাল নিয়ে নদীতে নামি। তবে তাদের দাবি অভিযানের এই দুই মাস সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে তারা উপকৃত হতেন। কমলনগর উপজেলার মৎস কর্মকর্তা তুর্য্য সাহা বলেন,  অভিযানকে সফল করতে আমরা কাজ করি তবে আমাদের কাছে কোন ধরনের অস্ত্র নেই, লোকবল সংকট যার কারণে আমাদের নদীতে অভিযানে যেতে একটু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন আমাকে যেভাবে ফোন দিয়েছেন সেভাবে নৌ পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটকেও ফোন দেন।একই রকম কথা বলেন রামগতি উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা। 

কোস্টগার্ডের রামগতি ক্যাম্পের কনটিজেন্ট কমান্ডার (সিসি) শামীম বলেন,  ঈদের আগের দিনও অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি বাধা জাল সহ কয়েক হাজার মিটার কারেন্ট জাল পুড়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন দিনের বেলায় আমরা অভিযান পরিচালনা করলেও রাতের বেলায় অভিযান পরিচালনা সম্ভব না হওয়ার কারণে জেলেরা জাল নিয়ে নদীতে নামে এছাড়াও লোকবল সংকটের কারণে অভিযান পরিচালনা করা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং মৎস্য কর্মকর্তাদের যৌথ অভিযানে অভিযান অনেকটাই সফল হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন রকম সংকটের মধ্যে থেকেও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে রামগতি বড়খেরী নৌ পুলিশ অভিযান সফল করতে জীবন বাজি রেখে নদীতে টহল দিচ্ছেন। 

প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ইলিশ নিষেধাজ্ঞার অভিযান সফলতা পাবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন সংশ্লিষ্টরা।