বৈধভাবে বিয়ের পরও স্বামী মমরেজ’র কাছে নির্যাতিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের উজলেফা
বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
বৈধভাবে
বিয়ের পরও স্বামী মমরেজ’র কাছে নির্যাতিত হয়ে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে
ঘুরছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলায় মহল্লার মৃত মোঃ আলাউদ্দিনের
মেয়ে উজলেফা বেগম (৪০)। স্বামী মমরেজ আলী (৫৮) একই এলাকার মৃত সাবেদ আলীর
ছেলে। নির্যাতন করে ক্ষ্যান্ত না হয়ে মামলা দিয়ে হয়রানী, হামলা এবং হুমকি
দেয়া অব্যাহত রেখেছেন নির্যাতনকারী উজলেফার স্বামী মমরেজ আলী। এঘটনায় বিচার
চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতিতা উজলেফা বেগম। বার বার মিমাংসার
নামে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসলেও কোন মিমাংসায় বসেনি মমরেজ।
ইতোমধ্যেই
একবার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে মীমাংসায় বসলেও সেখানেই আইনজীবীদের সামনে
উজলেফা কে মারধর করে মমরেজ আলী। এঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি
জিডি করেছেন উজলেফা বেগম। জিডি নম্বর-৬৩০, তারিখ-১১/০৬/২৩ইং। আর বিচার
চাওয়ায় এবং সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত মমরেজের দালাল চক্র।
মামলা
সূত্র ও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলায়
মহল্লার মৃত মোঃ আলাউদ্দিনের মেয়ে উজলেফা বেগম (৪০) এর সাথে ২০২১ সালের ১লা
ডিসেম্বর বিয়ে হয় একই এলাকার মৃত সাবেদ আলীর ছেলে মমরেজ আলী (৫৮)’র।
এফিডেভিট ও নিকাহ রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা
দেনমোহরে বিয়ে হয়। মমরেজ আলীর পূর্বের স্ত্রী থাকা সত্বেও দেশে এবং বিদেশে
থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে উজলেফার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে মমরেজ।
কুয়েতে
প্রবাসে থাকার পর দেশে এসেই উজলেফাকে বিয়ে করে মমরেজ আলী। বিয়ের পর শহরে
আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করতে থাকে মমরেজ ও উজলেফা। পূর্বের
সংসার ছেড়ে উজলেফাকে নিয়ে ভালই চলছিলো মমরেজের। কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয়
মমরেজের টালবাহানা। উজলেফাকে ভাড়া বাসায় রেখে দিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু
করে মমরেজ। পরে বাসা পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলায়
মহল্লায় বাসা ভাড়া করে রাখে উজলেফাকে। মাঝে মাঝে উজলেফার কাছে যাওয়া আসা
করতো মমরেজ।
এদিকে, মমরেজ
পূর্বের স্ত্রী তোহমিনা কে রেখে উজলেফাকে বিয়ে করার পরও অন্য একটি মেয়ের
সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে মমরেজ। এই পরকিয়ায় জড়ানোর পর থেকেই উজলেফার সাথে
চলাফেরা বন্ধ করে দূরে সরে যাওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে মমরেজ। এর ফলে উজলেফার
উপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে।
একপর্যায়ে
উজলেফার সাথে চলাফেরা একেবারে বন্ধ করে দেয় এবং উজেলেফাকে অস্বীকার করতে
শুরু করে মমরেজ। নিরুপায় হয়ে আদালতের আশ্রয় নেয় উজলেফা। উপরোক্ত বিষয়গুলো
নিশ্চিত করে এব্যাপারে ভূক্তভোগী উজলেফা তার উপর চালানো নির্যাতন, হয়রানী ও
মারধরের বিবরণ দিয়ে বলেন, মমরেজ আলীর স্ত্রী থাকার পরও নানাভাবে কৌশলে
প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমাকে বৈধভাবে বিয়ে করে।
তবে,
তাঁর এক আত্মীয় মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারণে পূর্বের স্ত্রী তোহমিনার
সাথে দীর্ঘদিন চলাফেরা বন্ধ রাখে এবং আমার সাথেও চলাফেরায় নানা কৌশল শুরু
করে। শেষ পর্যন্ত আমার সাথে নানান দূর্ব্যাবহার করতে থাকে। আমি মমরেজের
সাথে সংসার করার জন্য বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এলাকার গণ্যমান্য
ব্যক্তিবর্গ কে দিয়েও চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু কোন ফল হয়নি।
ওই
মেয়ের সাথে অবৈধ পরকীয়ার কারনে আমার সাথে সংসার করতে ছলচাতুরী করছে মমরেজ।
মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারের লোকজনকে হয়রানী করছে। আমার দেড়
ভরি স্বর্ণের গয়না বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে মমরেজ। গত ০৬/০৬/২৩ইং
তারিখে জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে মিমাংসার নামে বসে আমাকে মারধর করেছে,
এঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছি। বর্তমানে মমরেজ আলী
মিমাংসার নামে কুট কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও
মমরেজ এর ছেলে মামুনও স্থানীয় একটি দরিদ্র ঘরের মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক
গড়ে তোলে এবং একটি সন্তানের জন্ম দিলেও আজ পর্যন্ত সেই সন্তানকে স্বীকৃতি
দেয়নি। মমরেজও বিষয়টি জেনেও কোন প্রতিকার করেনি। মমরেজ আমার জীবন নস্ট
করেছে, এখন আমার সাথে সংসার করতেও অস্বীকার করছে। আমি তাঁর সাথে ভালোভাবে
সংসার করতে চায়। অন্যথায়, আমার যথাযথ ক্ষতিপূরন দিতে হবে এবং মমরেজের একটি
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
এব্যাপারে
সরজমিন জানতে গেলে, এলাকার সান্জুর আলী বলেন, সংসার করার শর্তে মমরেজ আলী
বিয়ে করে একই এলাকার উজলেফা কে। কিন্তু কিছুৃদিন সংসার করার পরই মমরেজ নানা
প্রকার ষড়যন্ত্র করে উজলেফাকে দূরে সরিয়ে দিতে চায়। এরই অংশ হিসেবে অসহায়
পরিবারের মেয়ে উজলেফার সাথে সংসার করবে না বলে দিয়েছে। এমনভাবে অসহায়
মেয়েটিকে পথে বসানোয় আমরা মমরেজ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।
একই
এলাকার খাইরুল ইসলাম জানান, একের পর এক মেয়েদের সাথে প্রতারণা এবং জীবন
নষ্ট করছে মমরেজ। মমরেজ তাঁর বাসায় অবৈধ সম্পর্কের কারণে তাঁর এক আত্মীয়ের
মেয়েকে বাসায় রেখে অসমাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তার বড় ছেলে মামুনও
একই রকমভাবে পাশর্^বর্তী একটি দরিদ্র মেয়ের জীবন নস্ট করেছে। এরা ভোগ করে,
মূল্য বা স্বীকৃতি দিতে চায় না।
মমরেজ
এর পরিবারের এমন অসামাজিক কার্যক্রমের কারণে সামজিকভাবে তাঁর পরিবারকে
একঘরে করে রাখা হয়েছে। তাঁর পরিবারের মুঠি, ফেতরা বা কোরবানীর মাংস জমায়েতে
(এলাকার সকলে মিলে একসাথে থাকা) নেয়া হয় না। তিনিও মমরেজ ও তাঁর পরিবারের
অন্যায়কারীদের শাস্তির দাবি জানান।
এব্যাপারে
অভিযুক্ত মমরেজ আলীর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি মিডিয়ার সামনে কোন বক্তব্য
দিতে চান নি। তবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে যা কিছু বলার মামলার আইনজীবী বলবেন।
আদালতের দেয়া সিদ্বান্ত যা হবে, তা মেনে নিবো।
মামলার
বাদী উজলেফা’র আইনজীবী এ্যাড. মাসির আলী জানান, আমার বাদীর মামলায় বার বার
মিমাংসার নামে আদালতের কাছ থেকে জামিন নিয়েছেন মামলার আসামী মমরেজ। কিন্তু
এখনো কোন মিমাংসা করেনি আসামী মমরেজ। উল্টো জেলা আইনজীবি সমিতি ভবনে
মিমাংসায় বসে বাদী উজলেফাকে মারধরও করে। এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।
মামলা চলমান আছে।
উল্লেখ্য,
এই সংবাদ সংগ্রহে সরজমিন জানতে পাঠানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মমরেজ এর লোকজন।
এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক নামধারী দালাল চক্র জেলা শহরের সিসিডিবি মোড়
এলাকার মৃত খাইরুল ইসলামের ছেলে ফেরদৌস সিহানুক শান্ত (৩৮)
চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’র
প্রকাশক-সম্পাদক ও চ্যানেল আই এর জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু এবং
দৈনিক চাঁপাই দর্পণের নিজস্ব প্রতিবেদক ইসাহাক আলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ
ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ও
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি)
করা হয়েছে।
উপরোক্ত সংবাদ
সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সরেজমিনে তথ্য নিতে যাওয়ায় তাদেরকে এই হুমকি দেয়া হয়।
গত শনিবার (৮ জুলাই) ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’র সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রঞ্জুর
নির্দেশনায় জেলা শহরের চাঁদলাই এলাকায় উপরোক্ত ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে যান
পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ইসাহাক আলীসহ আরও ২জন। এরপর অফিসে ফেরার পর
চাঁদলাই এলাকায় সংবাদ সংগ্রহে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কথা বলতে গেলে মুঠোফোনে
‘মমরেজ তাঁর কাছের লোক’ বলে সম্পাদক ও নিজস্ব প্রতিবেদককে গালিগালাজ করেন
ফেরদৌস সিহানুক শান্ত।